বুধবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২১, ০৯:৩৯ অপরাহ্ন
ড. সুমনপ্রিয় ভিক্ষু:
আজ পবিত্র ত্রৈমাসিক বর্ষাবাসের শেষ অষ্টমী উপোসথ দিবস, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ইং, ৯ আশ্বিন ১৪২৭ বাংলা, বৃহস্পতিবার।
মহামঙ্গল সূত্রে বলা হয়েছে: মাতা-পিতু উপট্ঠানং, পুত্তদারস্স সঙ্গহো, অনাকুলা চ কম্মন্তা, এতং মঙ্গল মুত্তমং।
The support of mother and father, the cherishing of wife and children and peaceful occupations; this is the highest blessing. অর্থাৎ মাতা – পিতার সেবা করা, স্ত্রী – পুত্রের উপকার করা, নিষ্পাপ ব্যবসাবাণিজ্য করা, উত্তম মঙ্গল।
নন্দিয় মৃগ জাতকে বলা হয়েছে: বোধিসত্ত্ব একসময় মৃগকুলে উৎপন্ন হন। তাঁর নাম হয় নন্দিয় মৃগ। ইনি অত্যন্ত মাতৃপিতৃভক্ত ছিলেন। মাতাপিতার বৃদ্ধাবস্থায় তিনি আহারাদি সংগ্রহ করে মাতাপিতার সেবা করতেন। তৎকালীন কোশলরাজ মৃগ শিকারে খুবই আমোদ পেতেন। তিনি প্রতিদিন জনসংঘসহ অরণ্যে গমন করে মৃগ শিকার করতেন। এতে লোকদের কৃষিকর্মাদির বিশেষ ক্ষতি হত। একসময় তারা পরামর্শ করে এক মৃগ উদ্যান নির্মাণ করেন। সেখানে মৃগদের থাকবার ও খাবার সর্ব ব্যবস্থা করে দেয়। আর একসময় তারা যোজন অরণ্য ঘিরে ঝোপ – ঝাড় পিটিয়ে মৃগদের ঐ উদ্যানে আবদ্ধ রাজাকে খবর দেয়, রাজা যেন যথাভিরুচি সে উদ্যান হতে শিকার করেন। মানুষেরা যখন মৃগ তাড়িয়ে আনছিল বোধিসত্ত্ব নন্দিয় মৃগ তখন মাতাপিতার সঙ্গে এক ঝোপে ছিলেন। তিনি স্থির করলেন আজ আমার জীবন ত্যাগ করে মাতাপিতাকে রক্ষা করব। তিনি মাতাপিতার সঙ্গে পরামর্শ করে মাতাপিতাকে সেখানে স্থির থাকতে বলে ঝোপে একটু আঘাত করতেই বাহির হয়ে অন্য মৃগদের সঙ্গে যোগ দেন। মানুষেরা মনে করেন ঐ ছোট ঝোপে একটি মাত্রই হরিণ ছিল। তারা আর ঝোপের ভিতর তালাশ করেনি। এতে বোধিসত্ত্বের মাতাপিতা রক্ষা পান। হরিণ হত্যা করতে কোন দিন রাজা কোন দিন অন্য কেউ আসত। হরিণেরা পরামর্শ করে পালা করে। যার পালা পড়ে সে সকল হতে পৃথক হয়ে থাকে। তাকেই হত্যা করে নেওয়া হয়। একদিন বোধিসত্ত্ব নন্দিয় মৃগের পালা পড়ে। তিনি দল হতে পৃথক হয়ে মৈত্রী ভাবনায় রত হন। সেই দিন রাজা নিজেই মৃগ হত্যা করতে আসেন। রাজা নন্দিয়ের প্রতি তীর নিক্ষেপ করেন। নন্দিয়ের মৈত্রী প্রভাবে সে তীর তাঁর দেহ বিদ্ধ করতে পারে নি। রাজা কয়েক বার চেষ্টা করেও বিফল হয়ে চিন্তা করলেন এ নির্জীব তীরও এর গুণ জানে অথচ আমি জানি না। তৎপর তিনি তীর ধনু ত্যাগ করে বোধিসত্ত্বের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং তাকে অভয় দেন। বোধিসত্ত্ব রাজাকে নানাভাবে প্রাণীহত্যার দোষ ও মৈত্রী করুণার গুণ ব্যাখ্যা করেন। রাজা বোধিসত্ত্বের প্রতি অত্যন্ত প্রসন্ন হন এবং বোধিসত্ত্বের ইচ্ছানুসারে রাজা উদ্যানের সব মৃগের এবং স্থলচর, জলচর, ও খেচর সর্বপ্রাণীকে অভয় প্রদান করেন।
বোধিসত্ত্ব রাজাকে পঞ্চশীলে প্রতিষ্ঠিত করে দশরাজধর্ম উপদেশ প্রসঙ্গে বলেন: দান (সবস্তু ত্যাগ চেতনা), শীল, পরিত্যাগ (বস্তুদান), সরলতা, মৃদুতা, তপ (উপোসথ কর্ম),মৈত্রীযুক্ত ক্রোধহীনতা, করুণাযুক্ত অহিংসা, ক্ষান্তি (সহনশীলতা), অবিরোধিতা এসব কুশল ধর্ম পালন করুন। তাতে আপনার বিপুল প্রীতি (আনন্দ) ও মানসিক সুখ উৎপন্ন হবে। বোধিসত্ব নন্দিয় রাজাকে পঞ্চশীলে ও দশরাজধর্মে প্রতিষ্ঠিত করে মাতৃপিতৃ দর্শনে গমন করেন। মাতৃপিতৃ সেবক আসন্ন মৃত্যু হতেও রক্ষা পায় জেনে জ্ঞানী সন্তান মাতা পিতার সেবা করে।
লেখক: ধর্মদূত ড. সুমনপ্রিয় ভিক্ষু, পূর্ব সাতবাড়ীয়া বেপারীপাড়া রত্নাঙ্কুর বিহার, চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম।
Facebook Comments