রবিবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২১, ০৮:৫৮ পূর্বাহ্ন
ড. সুমনপ্রিয় ভিক্ষু:
আজ পবিত্র অষ্টমী উপোসথ দিবস, ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ইং, ২৫ ভাদ্র, ১৪২৭ বাংলা, বুধবার।
শিল্প হচ্ছে হস্তকৌশল। অনাগরিক ও আগারিক ভেদে দ্বিবিধ। উহা নিজের ও পরের ইহ ও পারলৌকিক হিত – সুখাবহ বলে মঙ্গলকর। মহামঙ্গল সূত্রে বলা হয়েছে – বাহুসচ্চঞ্চ সিপ্পঞ্চ, বিনযো চ সুসিক্খিতো, সুভাসিতা চ যাবাচা, এতং মঙ্গলমুত্তমং। অর্থাৎ বহুশাস্ত্রজ্ঞান লাভ করা, বিবিধ শিল্প শিক্ষা করা, বিনয়ী ও সুশিক্ষিত হওয়া, সুভাষিত বাক্য বলা, উত্তম মঙ্গল। অতীতে বারাণসীতে অপূর্ব নৈপুণ্য সম্পন্ন এক সূত্রধর বাস করতেন। তাঁর ষোল জন সুদক্ষ শিষ্য ছিলেন। তাঁদের প্রত্যেকের অধীনে এক হাজার করে লোক কাজ করতেন। তাঁরা সকলে অরণ্যে গিয়ে কাঠের বিবিধ দ্রব্য সামগ্রী নির্মাণ করে বারাণসীতে এনে বিক্রয় করতেন। এভাবে কষ্টকর জীবিকার দ্বারা তাঁরা সকলে জীবন যাপন করতেন। একদিন তাঁরা সকলে পরামর্শ করেন এমন কঠোর পরিশ্রম দ্বারা বৃদ্ধকালে জীবন যাপন করা সম্ভব হবে না। সময় থাকতে কোন একটা ব্যবস্থা করা উচিত। সবার সিদ্ধান্ত অনুসারে সকলে এক একটি পক্ষী নির্মাণ করেন এবং উহার অভ্যন্তরে আপন স্ত্রী পুত্রাদি নিয়ে আকাশ পথে হিমালয়ে গমন করেন। সেই প্রদেশে তাঁরা নগর নির্মাণ করে তাঁদের আচার্যকে রাজপদে অভিষিক্ত করেন। আচার্য তাঁর ষোলজন প্রধান শিষ্যকে অমাত্যপদে বরণ করেন, সেই রাজা নগর ও রাজ্য কাষ্ঠবাহন নামে খ্যাত হয়। জগতে কশ্যপ সম্যক সম্বুদ্ধ উৎপন্ন হয়েছেন এ সংবাদ কাষ্ঠবাহন রাজা শুনে তার সত্যতা জানবার জন্য বহু অনুচর সহ ষোলজন অমাত্যকে পাঠান। যাবার সময় তাঁরা বলেন “যদি বুদ্ধ উৎপন্ন হন আমরা ফিরব না, নতুবা ফিরব।”রাজা তাঁর ভাগিনেয় অমাত্যকে বলেন, “তাঁত !তুমি ফিরে এসে আমায় সংবাদ দেবে।” তাতে তিনি সম্মত হন। তাঁরা সবাই বারাণসী গিয়ে শাস্তার পরিনির্বাণ প্রাপ্তির বিষয় শুনে অত্যন্ত মর্মাহত হন। রাজার ভাগিনেয় ব্যতীত সকলে ভিক্ষু হয়ে ধর্ম সাধনায় নিরত হন। রাজার ভাগিনেয় বুদ্ধের ধর্ম করক (জল ছাকনি বস্ত্রখণ্ড সহ জল পাত্র) নামক পরিভোগধাতু এবং একজন স্থবিরকে সঙ্গে নিয়ে কাষ্ঠবাহন নগরে গমন করেন। রাজা স্থবিরের নিকট ধর্ম শুনে অত্যন্ত আনন্দিত হন এবং একটি বিহার ও একটি চৈত্য নির্মাণ করায়ে যাবজ্জীবন পুণ্যকর্ম করে মৃত্যুর পর স্বর্গবাসী হন। সেই ভিক্ষুগণও মৃত্যুর পর স্বর্গে তাঁর সহচর হয়ে উৎপন্ন হন। তাঁরা এক বুদ্ধান্তরকাল দেবলোকে দিব্য সুখ ভোগ করে এই বুদ্ধোৎপত্তির পূর্বে মনুষ্যলোকে উৎপন্ন হন। তাঁদের আচার্য শ্রাবস্তীতে মহাকোশল রাজার পুরোহিতের ঘরে উৎপন্ন হন। তাঁর নাম রাখা হয় বাবরী। অন্যেরা শ্রাবস্তীর অন্যান্য ব্রাহ্মণকুলে জন্ম গ্রহণ করেন। অতীতের ষোল জন শিষ্য এবং রাজকুমার প্রসেনজিৎ বাবরী ব্রাহ্মণের নিকট এবং অন্যেরা উক্ত ষোলজনের নিকট বিদ্যা শিক্ষা করেন। পিতার মৃত্যুর পর প্রসেনজিৎ রাজত্ব লাভ করলে আচার্য বাবরীকে প্রভূত ধনসম্পত্তি দিয়ে পূজা করেন। অনেক বৎসর পর রাজার অনুমতি নিয়ে রাজপুরোহিত বাবরী সশিষ্য ঋষি প্রব্রজ্যায় প্রব্রজ্জিত হন। তাঁরা গোদাবরী নদীতীরে আশ্রম করে ফলমূলাহারে জীবন যাপন করেন। তখন আমাদের ভগবান সম্যক সম্বুদ্ধ প্রাদুর্ভুত হন। সে সংবাদ শুনে তিনি তার সত্যতা জানবার জন্য ষোলজন জ্যেষ্ঠ অন্তেবাসীকে অনেক সঙ্গীর সহিত বুদ্ধের নিকট প্রেরণ করেন। সূত্রনিপাতের পরায়ণ বর্গের বর্ণানুসারে তারা সকলে বুদ্ধের নিকট উপস্থিত হয়ে বুদ্ধের ধর্ম শুনে পিঙ্গিয় ব্যতীত সকলে প্রতিসম্ভিদাসহ অর্হত্ব সাক্ষাৎ করেন এবং “এস ভিক্ষু” উপসম্পদায় উপসম্পন্ন হন। পিঙ্গিয় অনাগামী হন। এমন বিচিত্র ধর্ম শ্রবণ করতে পারে নি বলে পিঙ্গিয় মামার জন্য চিন্তিত ছিলেন। তিনি মাতুল বাবরীর নিকট গিয়ে বুদ্ধগুণ ব্যাখ্যা করতে থাকেন। শাস্তা তাঁদের জ্ঞানপরিপক্কতা জ্ঞাত হয়ে তাঁদের দিকে সুবর্ণময় জ্যোতিঃ বিকীরণ করেন। সেই জ্যোতির মাধ্যমে পিঙ্গিয় শাস্তাকে দেখে বলেন ” শাস্তা এসেছেন”, বাবরী হাতজোড় করে আসন ত্যাগ করে দাঁড়ান। বুদ্ধ বাবরীকে দেখা দেন এবং তাঁদের উপযোগী ধর্মদেশনা করেন।সেই ধর্ম শুনে পিঙ্গিয় অর্হৎ ও বাবরী অনাগামী হন। পরিচিতিঃ ধর্মদূত ড. সুমনপ্রিয় ভিক্ষু, পূর্ব সাতবাড়ীয়া বেপারীপাড়া রত্নাঙ্কুর বিহার, চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম।
Facebook Comments