মঙ্গলবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২১, ০২:৩৮ অপরাহ্ন
ভদন্ত ড. সুমনপ্রিয় ভিক্ষু:
আজ পবিত্র বর্ষাবাসের তৃতীয় অষ্টমী উপোসথ দিবস।মঙ্গলবার, ১১ অগাস্ট, ২০২০ ইং, ২৭ শ্রাবণ, ১৪২৭ বাংলা, ২৫৬৪ বুদ্ধাব্দ।
জাতকে আমরা দেখতে পাই: অতীতে বারাণসীতে প্রবল পারক্রান্ত এক রাজা রাজত্ব করতেন। তাঁর অগ্রমহিষী দেবপ্সরার মত অত্যন্ত সুন্দরী ছিলেন। রাজা তাঁকে প্রাণাধিক ভালবাসতেন। তাঁর প্রতি রাজার প্রানঢালা অকৃতিম ভালবাসা সত্ত্বেও তিনি উপপতির সেবা করতেন। মহারাজ কালক্রমে ও বিষয় অবগত হন। এক সময় রাজা মহিষীকে ঐ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেন। মহিষী তার তীব্র প্রতিবাদ করেন এবং শপথ করেন যদি তিনি তেমন অন্যায় কাজ করেন মৃত্যুর পর তার যেন অশ্বমুখী যক্ষিনী হয়ে জন্ম হয়। মহিষীর বিবিধ স্ত্রী লীলায় রাজা মুগ্ধ হন এবং তাঁর ধারণা মিথ্যা বলে মনে করেন। সে অগ্রমহিষীর মৃত্যুর পর এক পর্বত পাদদেশের এক গুহায় অশ্বমুখী প্রেত হয়ে জন্ম গ্রহণ করেন। সে প্রেত তিন বৎসর যক্ষরাজ বৈশ্রবণের সেবা করে দৈর্ঘ্য – প্রস্থে ত্রিশ ও পাঁচ যোজন স্থানের অধিকারী প্রাপ্ত হয়। সে একদিন এক ব্রাহ্মণ যুবককে ধরে আনবার সময় পুরুষ সংস্পর্শে কামাভিভূত হয়। তার প্রতি প্রেমাসক্ত হয়ে তাকে হত্যা না করে স্বামীরূপে রক্ষা করেন। তার আহারাদির ব্যবস্থাও যক্ষিনী করত। সে বাহিরে যাবার সময় বিরাট এক পাথর দিয়ে গুহাদ্বার রুদ্ধ করে যেত। দীর্ঘকাল এভাবে বাসের ফলে কালক্রমে তাদের এক পুত্রসন্তান লাভ হয়। ছেলেটি বড় হলে সে ও তার পিতা মানুষ এবং মা যক্ষিনী বলে জানতে পারে। যৌবনকালে ছেলেটি অসাধারণ শক্তিসম্পন্ন হয়। মাতা বাহিরে আহারের অন্বেষণে গেলে সে অনায়াসে দরজার পাথর সরিয়ে বাহিরে এসে নানাস্থানে ঘুরে বেড়াত। সে একদিন পিতার সঙ্গে পরামর্শ করে যক্ষিনীর আওতা হতে মুক্ত হবার জন্য পিতাকে কাঁধে করে পলায়ন করে। যক্ষিনী ফিরে এসে তাদের না দেখে তাদের পদাঙ্ক অনুসারে গমন করে তাদের ধরে নিয়ে আসে। দ্বিতীয় বারও তেমন হয়। নিশ্চয় মায়ের বিচরণ স্থানের সীমা থাকবে মনে করে মাকে তা জিজ্ঞেস করে। মাও অপত্য স্নেহবশতঃ তা বলে দেয়। অন্য এক সময় মাতা আহারান্বেষণে গেলে পিতাকে কাঁধে করে বায়ুবেগে পলায়ন করে। তারা যখন যক্ষিণীর সীমা অতিক্রম করে মাঝ নদীতে গমন করে যক্ষিনী এসে তথায় তাদের দেখতে পায়। ফিরে আসবার জন্য যক্ষিনী তাদের আকুল প্রাণে অনুনয় বিনয় করতে থাকে। তারা কিছুতেই না ফেরায় যক্ষিনী পুত্রস্নেহ বশত বললেন – মনুষ্যলোকে জীবন যাপন অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। আমি “চিন্তামণি” নামক যে বিদ্যা জানি তার প্রভাবে বার বৎসর পূর্বে অপহৃত বস্তুও লাভ করা যায়। তুমি তা শিক্ষা কর, তোমার জীবিকার্জন সুখাবহ হবে। পুত্র নদীর মধ্যেই সে মন্ত্র শিক্ষা করে এবং মাকে বন্দনা করে বিদায় নেয়। সে অগ্রমহিষী ব্যভিচার করে এরূপ বিপুল দুঃখ ভোগ করেছিল। অজ্ঞানান্ধ মানব ক্ষণিক সুখের জন্য ব্যাভিচার করে বহু শত বৎসর নারকীয় দুঃখাদি ভোগ করে।
পরিচিতিঃ ধর্মদূত ড. সুমনপ্রিয় ভিক্ষু, পূর্ব সাতবাড়ীয়া বেপারীপাড়া রত্নাঙ্কুর বিহার, চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম।
Facebook Comments